শূণ্য থেকে ৫০০০ কোটি টাকার হা-মীম গ্রুপ প্রতিষ্ঠার গল্প এ.কে. আজাদের!

দেশের সফল শিল্পপতির একজন এ কে আজাদ। যিনি পরিশ্রম আর সততায় শূন্য থেকে শিখরে উঠেছেন। তারুণ্যে উজ্জীবিত এই শিল্পপতি দেশখ্যাত হা-মীম গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও সংশ্লিষ্টতা রয়েছেন তার। তিনি টাইমস মিডিয়া লিমিটেডের বাংলা ‘দৈনিক সমকাল’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক। এছাড়া তিনি ‘চ্যানেল টোয়েন্টিফোর’-এর চেয়ারম্যান।

মেধাবী আত্মপ্রত্যয়ী শিল্পোদ্যোক্তা এ কে আজাদের জন্ম ফরিদপুরের ঝিলটুলির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তার পিতা মরহুম আলহাজ এম এ আজিজ ছিলেন ফরিদপুর জেলার সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। এ কে আজাদ ১৯৮৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লাইড ফিজিকসে বিএসসি অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি চাকরিতে না গিয়ে ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন।

নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ব্যবসা অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন এবং গড়ে তোলেন ‘হা-মীম গ্রুপ অব কোম্পানিজ’। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি এই গ্রুপ অব কোম্পানিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। জীবনে সফল হওয়ার জন্য এ কে আজাদকে কম চড়াই-উতরাই পার হতে হয়নি। পাঁচ ভাই আর চার বোনের বিশাল সংসার ছিল তাদের। আজাদের ওপর চাপ ছিল পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরার। ছেলেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার পর মা-বাবাও এ আশায় দিন গুনছিলেন। কিন্তু চাইলেই কি আর ভালো চাকরি পাওয়া যায়!

চোখের সামনে দেখছিলেন, বছরের পর বছর চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা বহু ছাত্র চাকরি জোগাড় করতে পারছেন না। ফলে চাকরির আশা ছেড়ে ব্যবসায় নামেন আজাদ। শুরুতে লোকসান গুনলেও সেই ছেলেটি আজকের সফল শিল্পপতি এ কে আজাদ। পরিশ্রম ও সততায় উঠে এসেছেন শূন্য থেকে শিখরে। এ কে আজাদ জানান, “তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর দেখা দেয় থাকার সংকট। আবাসিক হল ছাড়া অন্য কোথাও থাকার জায়গা নেই। আসন সংকটে জায়গাও নেই হলে। ফ্লোরে ঘুমাতে হতো। একদিকে আসন সংকট, অন্যদিকে স্নাতকোত্তর পাস করা শত শত শিক্ষার্থী চাকরি না পাওয়ায় হলে ‘দখল’ বজায় রেখেছেন। ফলে নতুন শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা নেই বললেই চলে। শেষে সমস্যার সমাধান হয় অন্যভাবে।”

সাবেক শিক্ষার্থীদের বিছানা-বালিশ বাইরে ফেলে দেয় একটি ছাত্রসংগঠন। হলে জায়গা মিললেও এ কে আজাদের মনে তখন আরেক দুশ্চিন্তা। দুই বছর পর তারও স্নাতক শেষ হবে। চাকরি জোগাড় করতে না পারলে তাকেও কি এভাবে হলছাড়া করা হবে! চাকরি না পেলে হল ছেড়ে বাসা ভাড়া করে থাকবেন কী করে! তখন ১৯৮৪ সাল। শুরু হয় স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন। গ্রেপ্তার হন এ কে আজাদ। জেলে বসে খবর পেলেন, যাদের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তাদের অনেকে এরশাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। কেউ কেউ সামরিক সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিলেন এই নীতিহীনতার সঙ্গে আর নয়। আর রাজনীতি করবেন না। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে শুরু করবেন ব্যবসা।

২৩ দিন জেল খাটার পর মুক্তি পেলেন এ কে আজাদ। এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ওষুধ তৈরির ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সফল হতে পারলেন না। ১৯৮৫ সালে শুরু করেন গার্মেন্ট ব্যবসা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কোটা সুবিধা পেলেন না তার মতো নবীন ব্যবসায়ীরা। তখনও গার্মেন্ট ব্যবসা পুরোনোদের হাতে। সে সময় লোকসান হলো সাত লাখ টাকা। পুরোটাই ব্যাংকঋণের। গার্মেন্টে তালা পড়ল। ভবন মালিককে ভাড়া পর্যন্ত দিতে পারছিলেন না। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পুরোনো ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙতে হবে।

নবীন ব্যবসায়ীদের নিয়ে নামলেন কঠিন এই কাজে। ব্যবসায়ীদের সংগঠিত করলেন। নির্বাচনে জিতলেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। যত দিন গেছে, শুধু সামনের দিকে এগিয়েছেন। ব্যবসার পরিধি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে। তার প্রতিষ্ঠিত হা-মীম গ্রুপে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫৪ হাজার। গত বছর ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে হা-মীম গ্রুপ। আগামী বছরে লক্ষ্যমাত্রা রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। এখানেই থেমে যেতে চান না এ কে আজাদ। ৩৩ বছর আগে রাজনীতি ছাড়লেও এখনো সমাজবদলের স্বপ্ন দেখেন।

গত বছর ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ৫৫০ জন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়েছেন। তারা প্রত্যেকে চার বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বৃত্তি পাবেন। এবার এ সংখ্যা বাড়িয়ে ৭০০ জন করার ইচ্ছা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: ঢাকা টাইমস ডটকম

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *