টিউশনির ৬ হাজার টাকায় শুরু করে শতকোটি টাকার কোম্পানির মালিক মাহমুদুল হাসান সোহাগ!

রকমারি ডট কম, টেকশপ বাংলাদেশ লিমিটেড, পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড, অন্যরকম সফটওয়্যার লিমিটেড, অন্যরকম সল্যুশনস লিমিটেড, অন্যরকম ওয়েব সার্ভিসেস লিমিটেড, অন্যরকম ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেডসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার হাতে।

উদ্ভাস ও উন্মেষ কোচিং সেন্টারের মতো আধুনিক আর প্রতিশ্রুতিশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মাহমুদুল হাসান সোহাগ। তার এই স্বপ্নযাত্রার কথা শোনাচ্ছেন সফলতা ডট কম কে।

দেশে প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম তৈরির করে আলোচনায় এসেছিলেন সোহাগ। ২০১৪ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে তার প্রতিষ্ঠান পাই ল্যাবস বাংলাদেশ লিমিটেড ইভিএম সাপোর্ট দেয়। এছাড়া তিনি ইজি ভোটিং কাউন্ট সিস্টেম EVM ও ইজি ওমআর সল্যুশন সফটওয়্যারেরও জনক।

অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্সঃ তার মাথা রাজ্যের চিন্তায় পড়ে থাকে। এই চিন্তারই ফসল-অন্যরকম বিজ্ঞানবাক্স। বিজ্ঞানবাক্স বাংলাদেশের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র সায়েন্স কিট। এতে আছে রাজ্যের উপকরণ। যা দিয়ে নানারকম সায়েন্টিফিক এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। বিজ্ঞানবাক্স মূলত সাত বছর এবং তার বেশি বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য বানানো। সচেতন বাবা-মা তাদের সন্তানকে এই বক্স কিনে দেওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন। ছোটরাও ডুবে থাকে এর আজব এক্সপেরিমেন্টে।

স্বপ্ন শুরুর কথাঃ বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে উদ্যোক্তা হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন তিনি। মিরপুর সাড়ে ১১তে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘স্বপ্ন-ধরা’ স্কুল। সেখানে প্রায় ৩৬০ জন শিশু শিক্ষার্থীকে পরম মমতায় শিক্ষাদান করা হচ্ছে। পড়ার মাঝে যে আনন্দ তাকে বুঝে শুধু সার্টিফিকেটের জন্য না পড়ে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার তাগাদায় এর জন্ম।

এমন স্বপ্ন দেখা আর সেটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া হয়তো যেত না, যদি না সোহাগের শৈশব কাটত শিক্ষক চন্দ্রনাথ সাহা আর হেডমাস্টার যতীন চন্দ্র সাহার মতো অসাধারণ মানুষের স্নেহে। তাদের সান্নিধ্যে অল্প বয়সেই সাহিত্যের নানা পাঠ নেওয়ার প্রতি আগ্রহ জন্মায় তার মনে। আর এতেই পেয়ে যান জীবন সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা। অবশ্য বাবা-মায়ের অবদানও এতে কম নয়। জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তার শৈশব কেটেছে শিক্ষক পিতা আবুল হোসেন আর কর্মজীবী মা মনোয়ারা বেগমের প্রশ্রয়ে!

টিউশনির ছয় হাজার টাকাই মূলধনঃ শিক্ষাজীবনের উজ্জ্বল সাফল্য ছিল তার। এসএসসিতে স্থানীয় রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম স্থান অর্জনের পর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ২০০০ সালে এইচএসসিতে ঢাকা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ৪র্থ স্থান অধিকার করে বুয়েটে ভর্তি হন। তখন থেকেই নিজের সম্ভাবনা যাচাই করতে শুরু করেন ‘উদ্ভাস’ নামে একটি কোচিং সেন্টার।

ব্যতিক্রমী এই শিক্ষা সহযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে তার টিউশনির ছয় হাজার টাকা মূলধন থেকে। পরের কাহিনী তো গল্পের মতো! মোহাম্মদপুরের ছোট এক রুমে যাত্রা শুরুর পর সাত বছরে অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এটি। বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে অসংখ্য শাখা রয়েছে ‘উদ্ভাস’-এর। অসংখ্য শাখা আছে ‘উন্মেষ’-এরও।

বইয়ের দুনিয়ায় তোলপাড়ঃ এরপর তিনি গড়ে তোলেন রকমারি ডটকম। অনলাইনে বইয়ের অর্ডার নিয়ে সেগুলো গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার এই প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। এখন শুধু বই নিয়ে কাজ করলেও এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও নানা জিনিস তিনি পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন এ দেশের ব্যস্ত খরিদ্দারদের কাছে।

এছাড়া জার্সি আর স্পোর্টস আইটেম বিক্রি করেও বাণিজ্যিক চাহিদা মেটাচ্ছে তার প্রতিষ্ঠান। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়েও কাজ করছেন তিনি। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নটাও বড় হচ্ছে তার। আয়োজন করেছেন পিঠা কন্টেস্ট, আর ইচ্ছা আছে স্কুলের বাচ্চাদের টিফিন হিসেবে স্বাস্থ্যকর দেশি পিঠার জনপ্রিয়তা বাড়ানোর।

নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতিঃ পাশাপাশি সমাজের নানা অধিকার বঞ্চিতের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেও কাজ করে চলেছেন তিনি। নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি তার ভাষ্য, দৌড়াতে গেলে সামনে দেয়ালের মতো বাধা আসবেই; কিন্তু সেসবকে তোয়াক্কা না করে মোকাবেলা করতে হবে। ব্যতিক্রমধর্মী ইতিবাচক ভাবনা ও উদ্যোগের জন্য তিনি তরুণ উদ্যোক্তাদের কাছে উদাহরণ হওয়ার যোগ্য। উদ্যোক্তা হিসেবে অনেকটা উদ্ভাবনী ও সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে তার গড়ে তোলা ‘ই-কমার্স’-এ তাই তিনি রেখেছেন শিক্ষার আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান।

তথ্যসুত্রঃ সফলতা ডটকম

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *