বিদ্যা বালান, বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তিনি যে বলিউডে রাজত্ব করবেন, ধারণাই করেননি কেউ। এমনকি বিদ্যা বালান নিজেও না। অথচ তিনিই ‘পরিণীতা’, ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ‘ভুলভুলাইয়া’, ‘কাহানি’, ‘হামারি আধুরি কাহানি’, ‘শকুন্তলা দেবী’র নজরকাড়া সাফল্যে বহু নায়িকার ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন।
কোন সোনার কাঠির ছোঁয়ায় সাদামাঠা মেয়েটি বাংলা থেকে বলিউডে ছেয়ে গিয়েছেন? আসুন নায়িকার জন্মদিনে জেনে নিই সেই অজানা কাহিনি। বয়স কত হল বিদ্যার? ক্যালেন্ডার বলছে ৪০ পেরিয়ে গিয়েছেন। বিদ্যা আরও ভারিক্কি হয়েছেন। ছবির সংখ্যা কিন্তু কমেনি। ‘চেনাব গাঁন্ধী’, ‘চাঁদ ভাই’, ‘জলসা’ এবং একটি নাম না হওয়া ছবি তার হাতে। অর্থাৎ, ২০২২-ও তার দখলে!
অথচ অভিনেত্রী কোনওদিন ভাবতে পারেননি, তারও এ রকম মুঠো ভর্তি কাজ থাকবে। অবশ্যই মেধাবী রূপসী তিনি। কিন্তু গ্ল্যামারাস তো নন। তার উপরে তার প্রথম ধারাবাহিক মুক্তি পায়নি। প্রেক্ষাগৃহের মুখ দেখতে পায়নি তার প্রথম ছবিও। ফলে প্রযোজক, পরিচালকের চোখে তিনি অপয়া। এমন অভিনেত্রীকে কে ছবি দেয়?
ব্যস, এরপরেই দক্ষিণী ছবির দুনিয়া দরজা তার জন্য বন্ধ। পরপর ২৫টি ছবি থেকে আক্ষরিক অর্থেই ঘাড়ধাক্কা খেয়েছিলেন তিনি। রাতের পর রাত ঘুমোতে পারেননি বিদ্যা। এক সময় হতাশ হয়ে ফিরে এসেছেন বলিউডে। নাক-কান মুলে প্রতিজ্ঞা করেছেন, আর কোনও দিন দক্ষিণী ছবিতে মুখ দেখাবেন না। যদিও পরে সেই প্রতিজ্ঞা ভেঙেছিলেন নিজেই। মালায়লী ছবি ‘উরুমি’তে অতিথি শিল্পীর ভূমিকায় অভিনয় করেন বিদ্যা।
বলিউডে ফিরে ফের বিজ্ঞাপনী ছবিতে বিদ্যা। এই সময় তিনি প্রদীপ সরকারের বেশ কিছু বিজ্ঞাপনী ছবিতে অভিনয় করেন। ক্যামেরার চোখ দিয়ে দেখতে দেখতে নায়িকার চোখেমুখে বাঙালি পেলবতা খুঁজে পেয়েছিলেন প্রদীপ। তিনিও বাঙালি। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যাকে ঘিরে মুগ্ধতা তৈরি হয়েছিল তার মনে। তার আঁচ পেয়েছিল বলিউড। পত্র-পত্রিকার পাতায় পাতায় কেচ্ছার বন্যা তাই নিয়ে। সবার অলক্ষ্যে নায়িকা সেই প্রদীপের আলোতেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আলোকিত!
প্রদীপ সরকারের দুটি মিউজিক ভিডিওর মুখ ছিলেন বিদ্যা। একটির গায়ক পলাশ সেন। অন্যটির শুভা মুদ্গাল। ভিডিও দু’টি সেই সময়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। একটু একটু করে অন্য পরিচালকদের চোখেও রং ছড়াচ্ছিল নায়িকার অভিনয়। তারপরও ভয়ে কেউ ডাকতে পারছিলেন না তাকে। কারণ, দক্ষিণী দুনিয়ায় তার ২৫টি ছবি হাতছাড়া হওয়ার ঘটনা যে সবার জানা।
সেই সময় বাঙালিনী বিদ্যাকে ছবিতে নেওয়ার সাহস দেখালেন গৌতম হালদার। তার আর্ট ফিল্ম ‘ভাল থেকো’র নায়িকা হলেন তিনি। বদলে গৌতমের একটাই শর্ত, নিখুঁত বাংলা বলতে হবে। কথা রেখেছিলেন বিদ্যা।
শুধুই চেহারায় নয়, চলনে বলনে হয়েছিলেন নিখাদ বাঙালিনী। ছবি যথা সময়ে মুক্তি পেল। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানোও হল। বিদ্যা তুমুল প্রশংসিত। বেশ কিছু পুরস্কারও পেল ছবিটি। বিদ্যা পেলেন আনন্দ পুরস্কার। ‘ভাল থেকো’ সেরা সিনেমাটোগ্রাফি বিভাগে জাতীয় পুরস্কারের সম্মান পেতেই ঘুরতে থাকল ভাগ্যের চাকা।